স্বাধীনতার সূর্য, উজ্জিবিত হোক “জয় বাংলা”

গোপাল অধিকারী
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ইতিহাস বলে ১৯৭১ সালের
২৫ মার্চের মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেওয়া হয়। সেই থেকেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। আর এর পেছনের ইতিহাসটা
লম্বা। ১৭৫৭ সাল। যেদিন স্বাধীন বাংলার
সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দোলা ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের
সাথে যুদ্ধ করে।কিছু আত্মীয়
মহলের চক্রান্ত্র ও অসযোগীতায় নবাব পরাজিত হয় এ্বং তাকে হত্যা করা হয়। সেই থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ
চলে যায় ব্রিটিশদের অধীনে। চলে কোম্পানী আর ব্রিটিশদের শাসন। ব্যবসা করার জন্য ভারতীয় উপমহাদেশে আসলেও
বাংলার জমি সোনার চেয়েও খাঁটি যা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি ব্রিটিশরা। পায়তারা করে দেশকে
শাসন করার। এভাবে চলে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন। তাইতো বলা প্রায় দুইশ বছর স্বাধীন বাংলার
সূর্য অস্তমিত ছিল। প্রায় দুইশ বছর ব্রিটিশদের অত্যাচারে ভারতীয় উপমহাদেশ শোষিত হয়েছে সেই অর্থে বলা
সূর্য অস্তমিত ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ করে ভারত ও পাকিস্থান নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি
করা হয়। তার আগে বঙ্গভঙ্গসহ বিভিন্ন কৌশলে ব্রিটিশরা শাসনমেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন উদ্দেশ্য
সফল হয় নাই। তৎকালীন সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্থান। তখনও আজকের বাংলাদেশ শোষিত । খেলাটা একই ছিল শুধু
খেলোয়াড় পরিবর্তন হয়েছিল। যার প্রথম প্রমাণ মিলে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দূকে রাষ্ট্রভাষা
করার পাঁয়তারা করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু তা সফল হয় নাই। ভাষার জন্য রাজপথে মিছিল করে জীবন দিয়ে বাঙালী
জাতীয় পৃথিবীতে প্রথম বুঝিয়ে দিয়েছে তারা আন্দোলন করতে পারে। তাঁরা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে। সেদিন রফিক,
সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা
শহীদদের রক্ত বাঙালী জাতীর জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিল। সেদিনের সেই ইতিহাস নিজেদের অধিকার আদায়ের
প্রেরণ যুগিয়েছিল। সাহস যুগিয়েছিল পরবর্তী সকল আন্দোলন সংগ্রামের। যার প্রতিদানস্বরূপ ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকেই
রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৬৬ সালের ছয়দফা যার প্রথম দফাই ছিল স্বায়ত্তশাসনের,
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের
মোকাবেলা করে। ৭০ নির্বাচন দিয়ে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঐ পাকিস্থানীরা শুরু করে ক্ষমতা দেবার নামে
টালবাহানা। আলোচনার কথা বলে ২৫ মার্চ রাতে আকস্মিকভাবে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তারা। সেদিন রাতেই চলে আপারেশন
সার্চ লাইট। হত্যা করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে
একটি কলঙ্কিত দিন। দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের এদিনে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস,
ভয়ংঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচালিত এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খাকে
অঙ্কুরেই ধ্বংস করা। সেইরাতে হানাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল, শিকদের বাসা, পিলখানার ইপিআর সদরদপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একযোগে নৃশংসতা চালিয়ে হত্যা করে অগণিত
নিরস্ত্র দেশপ্রেমিক ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। কিন্তু তারা সফল হয় নাই। বাঙালীর অদম্য মনোবলের
কাছে ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালীর স্বাধীকার আদায়ে প্রেরণা
যুগিয়েছিল। মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনেছিল। সেদিন যদি এই ঘোষণা না আসত তাহলে হয়তবা আমাদের বিজয়ের দিন বিলম্বিত
হতো। জাতি হতো দিশেহারা। ২৬ মার্চের ঘোষণা জাতিকে
একটি পথ দেখিয়েছিল। সকলে একটি লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলে। ২৬ মার্চ আমাদের সেই লক্ষ্যটা নির্ধারণ করে দেয়। যা ইতিহাসে চিরস্মরণীয়
হয়ে থাকবে। আমার মনে হয় বাঙালীর স্বাধীনতার ইতিহাস একটি স্বাধীনতা প্রত্যাশী দেশকে অনুপ্রেরণ
যোগাবে। শুধু দেশ নয় একটি ব্যক্তি মনেও যোগাবে সাহসের বাতি। স্বাধীনতার সেই সূর্য উজ্জিবিত হোক। এবছরের স্বাধীনতা দিবসটি
একটু আলাদা। বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে স্বাধীনতা দিবসের সকল কর্মসূচী বাতিল করেছে সরকার। তবুও বলি স্বাধীনতার
দ্যুতি আলো ছড়াক সকল প্রাণে। জেগে উঠুক বাংলা, শ্লোগান বলি “জয় বাংলা”।
লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
কোন মন্তব্য নেই