পাবিপ্রবি ভিসির ১০১ অনিয়মের প্রতিবাদে শিক্ষকের একক প্রতিকী অনশন
ইতিহাস টুয়েন্টিফোর প্রতিবেদকঃ
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রােস্তম আলীর বিভিন্ন অনিয়মের তদন্ত এবং শিক্ষকদের হয়রানীর প্রতিকার চেয়ে একক প্রতিকী অনশন কর্মসূচী পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকাল এগারােটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সহযােগী অধ্যাপক ড. এম আব্দুল আলীম এ । কর্মসূচী পালন করেন। এ সময় তিনি অভিযােগ করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, যােগদানের পর থেকেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রােস্তম আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। একটা ভয়ের রাজত্ব প্রদিষ্ঠা করেছেন।
তিনি কথায় কথায় শিক্ষকদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে যেসকল শিক্ষক ভিন্ন মত পােষণ করেন, তাদেরকে তিনি বিভিন্নভাবে হয়রানী করেন, শােকজ করেন। এখন তিনি মামলার দিকে ধাবিত হচ্ছেন। ড. আলীম বলেন, বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম-দূর্নীতি করে বিশ^বিদ্যালয়ের যে আর্থিক ক্ষতি করেছেন তার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষকদের হয়রানীর প্রতিকার দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে পাবিপ্রবি উপাচার্য এম রােস্তম আলীর কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন বক্তব্য নেই, যা খুশি করুক। পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রােস্তম আলীর সীমাহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ১০১টির যে। তালিকা তিনি তুলে ধরেছেন সেগুলাে হলাে:
১. পাবিপ্রবির প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে অস্বচ্ছতা ও ধীরগতি।
২. ইচ্ছামতাে নকশা পরিবর্তন করে ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ।
৩. উপাচার্যের বাংলােকে গেস্টহাউজ বানিয়ে বাড়িভাড়া ফাঁকি ১ লক্ষ, ৩৬ হাজার ৮৭৫ টাকা।
৪. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার, টক, টেক প্রভৃতিতে অস্বচ্ছতা।
৫. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে ডিপিপি বহির্ভূত অপারেটিং চার্জ খাতে ১১ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৪৭ টাকা আর্থিক অনিয়ম।
৬. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ী ক্রয়ের পূর্বেই গাড়ীর জ্বালানী ও লুব্রিকেন্ট বাবদ ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়।
৭. দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার নিয়ােগ দিয়ে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু ; বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি ১১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা।
৮, পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে ১০ কোটি টাকার বইয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডার প্রদান।
৯. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে টেন্ডারের সিডিউল বিক্রির কোষাগারে ৪৩, হাজার টাকা জমা দেওয়া।
১০. রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি ক্রয় করে ৭৪ লক্ষ, ৭৩ হাজার টাকা অনিয়ম।
১১. কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা লােন দিয়ে ফেরত না আনা।
১২. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপােজিট তহবিল থেকে সাময়িক লােন দিয়ে তা যথাসময়ে ফেরত না আনা।
১৩, সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলে স্থানান্তর না করা।
১৪. ছুটি শেষে যােগদান না করা শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওনা আদায় না করা।
১৫. তামাদি এড়ানাের জন্য বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ ডিপােজিট তহবিলে স্থানান্তর করা।
১৬. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে একই কাজে বারবার টেন্ডার দেওয়া।
১৭. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে বারবার টেন্ডার বাতিল করায় আর্থিক অপচয়।
১৮, জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে চুক্তিভিত্তিক নিয়ােগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নিয়ােগ।
১৯. পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস কমিটিতে পাশ কাটিয়ে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের সকল কাজে সিদ্ধান্তগ্রহণ।
২০. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজগুলাে (৪টি) একই ফার্মকে দেওয়া।
২১. প্রজেক্ট গেজেট অনুযায়ী প্রজেক্ট পাশ না করে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের প্রাধান্য রাখা, যা কাজের মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
২২. পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে নির্দিষ্ট খাতের বাইরে বিপুল অর্থব্যয়।
২৩. অর্থ কমিটিতে পাশ করা পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের বিভিন্ন ব্যয়ের হিসাব রিজেন্ট বাের্ডে প্রদর্শন না করা।
২৪. রূপপুরের বালিশ কাণ্ডে যুক্ত প্রতিষ্ঠানকে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দেওয়া।
২৫. রডের পরিবর্তে বাঁশ দেওয়ার অভিযােগ থাকা প্রতিষ্ঠানকে পাবিপ্রবির উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ দেওয়া।
২৬. অর্গানােগ্রাম লঙ্ঘন করে মাননীয় উপাচার্যের গাড়িবিলাস ; বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি ১ কোটি টাকার বেশি।
২৭. সান্ধ্যকালীন কোর্স থেকে বিনা স্বাক্ষরে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মাননীয় উপাচার্যের টাকা গ্রহণ।
২৮. শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদ-পদবি বন্টনে অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব।
২৯, জিএফআর-৯০ লঙ্ঘন করে মাননীয় উপাচার্যের বাসভবন মেরামতে বরাদ্দকৃত ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় না করা।
৩০. ভর্তিকমিটির অর্থের উৎসে ১০% আয়কর কর্তন না করা রাষ্ট্রের ক্ষতি ১, ৫৩, ৯৬৮ টাকা।
৩১. প্রাপ্যতার অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা দিয়ে ২৮ লক্ষ, ৯৩ হাজার ৯৭০ টাকা আর্থিক অনিয়ম।
৩২. অগ্রহণযােগ্য ভাউচারে গাড়ীর মবিল ক্রয় করে ২ লক্ষ, ৪২ হাজার ২৫০ টাকা আর্থিক অনিয়ম।
৩৩. বিলে গাড়ির নম্বর উল্লেখ না করে মেরামত ও যন্ত্রপাতী ক্রয় করে ১২ লক্ষ, ৪৫ হাজার ৬২৬ টাকা অনিয়ম।
৩৪. বিধিবহির্ভূতভাবে গাড়ি মেরামত করে ১ লক্ষ, ৮৯ হাজার ৮০৩ আর্থিক অনিয়ম।
৩৫. প্রাপ্যতার অতিরিক্ত গাড়ির জ্বালানী ব্যবহার করা ১ লক্ষ ২ হাজার ৯০৫ টাকার অনিয়ম।
৩৬. প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে উপাচার্যের প্রতিটি গাড়ির জন্য ৬০০ টাকা হারে ১২০০ টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও মাননীয় উপাচার্য দুটি গাড়ি ব্যবহার করে মাসে কাটেন ৬০০ টাকা।
৩৭. উপাচার্যের রাজশাহীর বাসভবনের বিদ্যুৎ বিল বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে গ্রহণ।
৩৮. উপাচার্যের রাজশাহীর বাসভবনের ইন্টারনেট বিল বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে গ্রহণ।
৩৯. উপাচার্যের রাজশাহীর বাসভবনের গৃহকর্মীর বেতন বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে গ্রহণ।
৪০. উপ-উপাচার্যের বিদায় অনুষ্ঠান না হওয়া সত্তেও এতে তাতে টাকা খরচ দেখানাে।
৪১. প্রয়ােজনাতিরিক্ত গাড়ি থাকা সত্ত্বেও বিমানে বিলাসি ভ্রমণে মাত্রাতিরিক্ত টিএডিএ গ্রহণ।
৪২. শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়।
৪৩. ঢাকার গেস্ট হাউসে কেবল মাননীয় উপাচার্যের জন্যই বিলাসবহুল কক্ষ নির্মাণ।
৪৪. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অপরিকল্পিতভাবে বেঞ্চ নির্মাণ এবং তা আবার মাটি দ্বারা ভরাট করা।
৪৫. নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইমার্জেন্সি রিজেন্ট বাের্ড করা; ভিন্ন তারিখ ও ভিন্ন নির্বাচনী বাের্ডের মাধ্যমে দুটি বিভাগে প্রফেসর পদের নিয়ােগ ও একটি বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন কৌশলে একই এজেন্ডাভুক্ত করে পাশ করা; অথচ এই তিনটি নিয়ােগ ও অপগ্রেডেশন তিনটি আলাদা আলােচ্যসূচি হওয়া বাঞ্ছনীয়; একের অধিক এজেন্ডা দিয়ে জরুরি রিজেন্ট বাের্ড করার সুযােগ নেই।
৪৬. ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ভিন্নমত পােষণকারী শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ফাইল টেনে হয়রানিমূলকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন।
৪৭. একই যােগ্যতাসম্পন্ন অনেক শিক্ষক থাকলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দু-একজনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে হয়রানি করা।
৪৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র অধ্যাপক নামে কোনাে পদের অস্তিত্ব না থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষককে এ পদে উচ্চ বেতনে চুক্তিভিত্তিক নিয়ােগ।
৪৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলােতে প্রয়ােজনীয় কর্মচারী না থাকলেও মাননীয় উপাচার্য নিজের বাংলাে ও রাজশাহীর বাড়িতে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত কর্মচারী খাটান।
৫০. নিজের পুত্রকে চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মকারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সােবহানকে রিজেন্ট বাের্ডের সদস্য নিযুক্ত করে একটি সিন্ডিকেট/চক্র তৈরি করে পরস্পর যােগসাজশে লাগামহীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক, আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম করা।
৫১. ইউজিসির কর্মসম্পাদন চুক্তি লঙ্ঘন করে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট বন্ধ করা।
৫২. অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়ােগপ্রাপ্ত দুই শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার পূর্বেই দীর্ঘ সময় বেতন বন্ধ রাখা।
৫৩. খ্কালীন কয়েকজন শিক্ষক দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন-যাপন করলেও তাদের সকলকে নিয়ােগের ব্যবস্থা না করা।
৫৪. ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রাখা।
৫৫. গ্রাজুয়েট ও শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়াই দীর্ঘ সময় রিজেন্ট বাের্ডের কার্যক্রম পরিচালনা।
৫৬. রিজেন্ট বাের্ডের সভায় নােট অব ডিসেন্ট দেওয়ায় এক অধ্যাপককে হয়রানি।
৫৭. রিজেন্ট বাের্ডের সভা এবং অন্যান্য সভায় শিক্ষকদের কথা বলতে না দেওয়া।
৫৮. দুর্ব্যহার দ্বারা কর্মের পরিবেশ নষ্ট করা; এ অভিযােগে উপ-উপাচার্যের পদত্যাপত্র জমাদান।
৫৯. কোনাে কারণ না দর্শিয়ে এবং অভিযােগ না জানিয়ে শিক্ষকদের শাস্তিপ্রদান।
৬০. শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে সহাবস্থান নষ্ট ও কর্মের পরিবেশ বিনষ্ট করা।
৬১. মেয়াদপূর্তির পূর্বেই অপমানজনকভাবে ছাত্র উপদেষ্টাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।
৬২. মেয়াদপূর্তির পূর্বেই অপমানজনকভাবে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভােস্টকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।
৬৩. মেয়াদপূর্তির পূর্বেই অপমানজনকভাবে শেখ হাসিনা হলের প্রভােস্টকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।
৬৪. মেয়াদপূর্তির পূর্বেই অপমানজনকভাবে পরিবহণ প্রশাসককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।
কোন মন্তব্য নেই