শ্যালোর ইঞ্জিনচালিত ট্রলার যোগে পদ্মা নদী ভ্রমণ করে পিকনিক থেকে ফেরা ৩৫ জনকে নদীতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করল ঈশ্বরদী থানা ও লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সাহসী পুলিশ সদস্যরা।
শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ঘাট থেকে পিকনিক শেষে নিজ বাড়ি উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডায় ফেরার পথে পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এই দুর্ঘটনায় কারো প্রাণহানি ছাড়াই সবাইকে সুস্থ শরীরে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির।
প্রত্যক্ষদর্শী পদ্মা নদীর মাঝি ও জেলেদের সূত্রে জানা যায়, রাত ১০টার দিকে ৩৫ সদস্যের পিকনিক দলটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীর সাঁড়া থেকে লক্ষ্মীকুন্ডায় ফিরছিলেন। কিন্তু হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কিছুটা উজানে হঠাৎ করে তাঁদের বহনকৃত ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। মাঝি ট্রলারটিকে মাঝ নদীতেই নোঙর ফেলে আটকানোর চেষ্টা করেন। পদ্মায় বর্তমানে প্রবল স্রোতের কারণে সেই প্রচেষ্টা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীরা চরম আতঙ্কিত হয়ে প্রাণহানির আশংকায় চিৎকার শুরু করেন। এ খবর পেয়ে পদ্মাপাড়ের আশেপাশ থেকে লোকজন এসে ভিড় জমায়েত করে প্রাণহানির আশংকায় আতংকিত হয়ে আহাজারি শুরু করেন। অবস্থার বেগতিক দেখে থানায় খবর দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ এসে অল্পের জন্য প্রাণহানি থেকে ৩৫ জনকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় নদী থেকে উদ্ধার করে আনেন।
পিকনিকে এসে পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া থেকে পুলিশের দ্বারা উদ্ধার হয়ে অল্পের থেকে প্রাণে বেঁচে আব্দুল আলীম (২৫), মহসিন শেখ (৪৫), মজিবর (৩০), মোমিন (২৫), ইউসুফ (২৩), আব্দুল আলীম (১৯), আব্দুল মোমিন (২০) বরাত দিয়ে লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল হান্নান জানান, তাঁদের সবার বাড়ি ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁরা ৩৫ জন ট্রলার যোগে পিকনিক করতে সাঁড়া ঘাটে গিয়েছিলেন। তাঁদের দলের ৩৫ জনই জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। সবাই সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির বলেন , সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ও নৌ- পুলিশের সাহসী সদস্যদের নিয়ে পদ্মা নদীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পুলিশ সদস্যরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে দ্রুত পদ্মা নদীর প্রবল স্রোত থেকে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় পিকনিক দলের সকল সদস্যকে নিরাপদে পাড়ে নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় থানা পুলিশ, নৌ-পুলিশের চরম আন্তরিকতায় এবং পদ্মা নদীর স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতায় কোনো প্রাণহানি ছাড়াই সকলকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের বহনকৃত বিকল হয়ে যাওয়া ট্রলারটিকে নদী থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃতদের লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভরা পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতের মধ্যে এভাবে চলাচলসহ পিকনিকে না যাওয়ার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন এই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা।