ট্রেন বাঁশি বাজাইলে মোর তিন ছাওয়াল মরতো না’ » Itihas24.com
ঈশ্বরদী২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ঈশ্বরদীর সবশেষ নিউজ । ইতিহাস টুয়েন্টিফোর

ট্রেন বাঁশি বাজাইলে মোর তিন ছাওয়াল মরতো না’

বিশেষ প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৮, ২০২১ ৮:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া দুই পরিবারের চার জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।
বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়ার বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। বুধবার সকাল ৮টার দিকে মনসাপাড়ার বউবাজার এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে ওই চার জনের মৃত্যু হয়। খুলনাগামী মেইল ট্রেনে কাটা পড়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন উপজেলার কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়ার বউবাজার এলাকার রেজয়ান আলীর তিন সন্তান শিমু আকতার (১০), লিমা আকতার (৮) ও মমিনুর রহমান (৩) এবং একই এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে শামিম হোসেন (৩৫)। ঘটনাস্থলে শিমু ও লিমা এবং হাসপাতালে শামিম ও মমিনুর মারা যায়।বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিমু, লিমা ও মমিনুরের মা মজিদা বেগম বিলাপ করে কাঁদছেন। কেঁদে কেঁদে মজিদা বলছেন, ‘হামার ছোট সংসার পেটের দায়ে ছেলেমেয়েকে বাড়িতে রেখে কামত যাবার লাগে। মোর স্বামী রিকশা চালায় ও মুই চুলের কারখানাত কাম করো। কায় জানে যাদুর ঘরে ট্রেন দিয়ে কাটা যাবে। মোর বুকের ধনকে ফিরি দেয়। ট্রেনখান বাঁশি বাজাইলে ছাওয়ালা সরি গেল হায়। এ ঘটনার বিচার চাই।’
এলাকাবাসী জানায়, শামিম হোসেন পরোপকারী ছেলে। সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আজ তিন শিশুর জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দিলো। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোক নেমেছে। কিছুতেই থামছে না শামিমের স্বজনদের কান্না।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বউবাজার এলাকায় অবস্থিত অরক্ষিত রেল গেটের পাশে খেলছিল শিশুরা। পাশেই চলছিল লাইনে ব্রিজ নির্মাণের কাজ। ব্রিজের কাজের ইট পরিবহনের ট্রলির শব্দে ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পায়নি শিশু ও ট্রলির শ্রমিকরা। ওই জায়গার পাশেই থাকা রেলগেটের নাইটগার্ড শামিম ট্রেনের শব্দ শুনে শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় সকাল ১০টার দিকে চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। তারা ট্রেনে ভাঙচুর চালান। এতে প্রায় এক ঘণ্টা পর স্টেশন ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুর রহমান বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি কিংবা অভিযোগ না থাকায় স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তাস্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আমরা রেললাইনের দুই পাশে জনসচেতনতামূলক সভা ও প্রচারণা চালাচ্ছি। রেললাইনের পাশের বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা গেলে এমন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। তাদের আশ্বস্ত করে পুলিশ সুপার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অরক্ষিত ওই রেলগেটে গেটকিপার নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।

author avatar
SK Mohoshin

বিজ্ঞাপন

BONOLOTA IT POS ads