সাইবার ক্রাইম রুখতে নারীর ভয়-লজ্জা রাখলে চলবে না’ » Itihas24.com
ঈশ্বরদী১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ঈশ্বরদীর সবশেষ নিউজ । ইতিহাস টুয়েন্টিফোর

সাইবার ক্রাইম রুখতে নারীর ভয়-লজ্জা রাখলে চলবে না’

বিশেষ প্রতিবেদক
জানুয়ারি ১৯, ২০২২ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ডিজিটালাইজেশন এখন বৈশ্বিক বাস্তবতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। হাত বাড়ালেই ডিজিটাল ডিভাইস। বেড়েছে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ অপরাধের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দেশে সাইবার অপরাধের শিকার বেশিরভাগই তরুণী। তবে বয়স্ক নারীরাও এখন হয়রানির বাইরে নেই।
প্রথম দিকে সাইবার ক্রাইমের শিকার তরুণীরা নিজেদের করণীয় সম্পর্কে না জানায় নিরূপায় হয়ে ঘরে বসে থাকতেন। তবে এ ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সচেতনতা বাড়ানোর নানান কর্মসূচি কাজে এসেছে। এখন প্রতিদিন অসংখ্য ভুক্তভোগী অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে। পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় সাহস পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরাও।
সাইবার অপরাধ দমনে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান। সাইবার অপরাধের শিকার হলে করণীয় বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন গনমাধ্যমের।
নারীরা সবচেয়ে বেশি কীভাবে সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন?
ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের একটি বড় অংশ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নারীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, যাকে বলা হয়- কম্প্রোমাইজ হয়ে যাওয়া। অথবা নারীদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। যেসব নারী ফেসবুক বা অন্য মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পেজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপরাধ বেশি হয়। এছাড়া সাইবার বুলিং, অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধের শিকারও হচ্ছেন নারীরা। পুলিশের কাছে তরুণীদের যত অভিযোগ আসে, তার অধিকাংশই প্রেমঘটিত সাইবার ক্রাইম। এসব ক্ষেত্রে তাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাইবার ক্রাইম এখন যে পর্যায়ে চলে গেছে, ভয়-লজ্জা পেয়ে বসে থাকলে চলবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় ভুক্তভোগীদের সাইবার হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে। অভিযোগ পেলে দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করে।
কোন কোন মাধ্যমে নারীরা বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন?
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টিকটক, টুইটার, ভাইবার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমোর মাধ্যমে নারীরা সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাইবার বুলিং। নারী ও শিশুরা এর প্রধান শিকার। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে কারও ব্যক্তিগত দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন বা অন্যায় কোনো কিছুতে প্রলুব্ধ করা। কিশোর-কিশোরীরাই প্রথমদিকে এ ধরনের হয়রানির শিকার বেশি হচ্ছিল। এখন মধ্য বয়সীরাও এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
কোন বয়সের নারীরা সাইবার অপরাধীদের টার্গেটে বেশি পরিণত হচ্ছেন?
গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেসবুকে অন্তত ২০ হাজারের বেশি নারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের নির্ধারিত অফিসিয়াল নম্বরে ফোন কল এসেছে প্রায় আট হাজারের মতো। ফোনে দুই হাজার ৭শর বেশি এ ধরনের সমস্যার সমাধান করেছি। সাড়ে তিনশোর বেশি অভিযোগ আমরা লিখিতভাবে নিয়েছি। এর মধ্যে নারীদের হয়রানি, উত্ত্যক্ত, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা করার ঘটনা বেশি। তাদের মধ্যে বেশি রয়েছে টিনএজ মেয়েরা। অর্থাৎ যারা বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাদের বয়স ১৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীরাও এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তবে আমাদের এসব হিসাবের বাইরেও অনেক নারী আছেন, যারা লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ করতেই চান না।
কী ধরনের অভিযোগ বেশি আসছে?
নানাভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। তাদের ছবি এডিট অর্থাৎ সম্পাদনা করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা প্রেমের সম্পর্কে গভীরতায় গেছে, সেটাকেই পরবর্তী সময়ে পুঁজি করছে আর্থিক লাভের আশায়। সম্পর্কটা নষ্ট করে দিয়ে বলছে টাকা না দিলে ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল করে দেবো। দেখা যাচ্ছে, বাবা-মা রক্ষণশীল, সেক্ষেত্রে মেয়েটা অসহায় হয়ে পড়ছে। তখন হয়তো একটা অবৈধ প্রস্তাব দিচ্ছে। প্রস্তাবে জড়ালে ফের প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে। বিষয়টি খুবই ভয়ংকর। পরিবারের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাবে কীভাবে- এমন চিন্তা থেকে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও দ্বিধা করেন না। অন্তরঙ্গতার কতটুকু যাবো, বন্ধুত্বের কতটুকু জায়গা পর্যন্ত আমি মেনটেইন করবো—এগুলোর সীমা থাকাটা জরুরি। সামাজিক অনুশাসন মেনে চলাটাও অত্যন্ত জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরাপদ করার উপায় কী?
কামরুল আহসান: এক পাসওয়ার্ডে মাসের পর মাস চলতে পারবেন না। সিকিউরিটির জন্য এটা দরকার। বিশেষত নারীরা সহজেই যে কোনো কিছু বিশ্বাস করেন। তারা আর্থিক প্রতারণার শিকার বেশি হন। মোবাইলে ব্যক্তিগত কিছু স্টোর করে না রাখাই ভালো। যে অংশগুলো একদম ব্যক্তিগত, সেগুলো হার্ডডিস্কে সরিয়ে নেওয়া ভালো। যে কোনো সময় আপনার মোবাইলটি হারিয়ে যেতে পারে, তখন স্টোরে থাকা ডেটাগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এ রকম ঝুঁকির মধ্যে অনেকে পড়েছেন। অনেকের ব্যক্তিগত ছবি এমনভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, টাকা-পয়সা দিয়েও তারা রক্ষা পায়নি। এসব ঘটনার প্রভাব খুব ভয়াবহ। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরেপড়া, মাদকসেবন ও আত্মহত্যার মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি। সবকিছুর পরে বলতে চাই, সাইবার অপরাধ থেকে সন্তানকে বাঁচাতে মা-বাবার দায়িত্বটা সবার আগে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে শেখানো জরুরি।

author avatar
SK Mohoshin

বিজ্ঞাপন

BONOLOTA IT POS ads