জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত শোভনের » Itihas24.com
ঈশ্বরদী২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ঈশ্বরদীর সবশেষ নিউজ । ইতিহাস টুয়েন্টিফোর

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত শোভনের

বিশেষ প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২১, ২০২২ ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা ও মা-বাবার নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশুনা করে মাধ্যমিকে রাজশাহী বোর্ড থেকে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে শোভন আক্তার শুভ (১৬)। গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় শোভন মথুরাপুর সেন্ট রীটাস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু তার এই কৃতিত্বের পরে পরিবারে এখন আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তা যেন সঙ্গী হতে চলেছে। নিভে যেতে বসেছে শুভর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। অর্থের অভাবে উচ্চশিক্ষা শুভর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পাবানার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা গ্রামের দিনমজুর উজ্জল হোসেন ও গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান শুভ। সারাদিন অন্যের বাড়িতে কিংবা প্রতিষ্ঠানে শ্রম বিক্রি করে যে টাকা বাবা উজ্জল হোসেন উপার্জন করেন সেটা দিয়ে সংসার চালাতেই শেষ হয়ে যায়। এরপরে ছেলের পড়াশোনার খরচ বহন করা একেবারেই অপারগ বলে তিনি জানান।
শুভর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিল শুভ। তার বড় ভাই সৌরভ আক্তার সম্রাট বিয়ে করে বউ নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মাধ্যমিকে টিউশনি করে উপার্জন করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে সে। বাবার অভাবের সংসারে বোঝা না হয়ে হাত খরচের টাকা জোগার করতে চাটমোহর সাপ্তাহিক হাটে কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেছে শুভ।
শোভন আক্তার শুভ জানায়, নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে ও দোকানে ঘণ্টা চুক্তিতে কাজের বিনিময়ে আয়ের টাকায় নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে আসছি। এখন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি ও পড়ালেখায় প্রয়োজনীয় টাকা তার দিনমজুর বাবার পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য শুভ এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে এখন দিন পার করছে বলে জানা গেছে।
শুভর মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমিসহ আমার পরিবারের কেউই প্রাইমারির গণ্ডি পার হতে পারিনি। তবে ছেলেকে অনেক দূর পড়াশোনা করার স্বপ্ন আমার আগে থেকেই ছিল। সেটাই করার চেষ্টা করেছি। ছেলে শুভর পড়াশুনার আগ্রহ ও এবারের এসএসসির রেজাল্ট দেখে আমাদের মনে ওকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। যখন জানতে পারলাম এরপরে ছেলের উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে, তখন থেকেই আমাদের মনটা খুবই খারাপ হয়ে আছে। আসলে আমাদের পক্ষে অনেক টাকা খরচ করে ওর পড়াশোনা করানো সম্ভব নয়।
মূলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ফরহাদ হোসেন মানিক বলেন, উজ্জল দরিদ্র মানুষ। তার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে শুনেছি। এমন ছেলেকে যদি ভালোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় তাহলে দেশ তথা রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু হবে বলেই বিশ্বাস করি।
মথুরাপুর সেন্ট রীটাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেরি মনিকা জানান, শুভ একজন মেধাবী ছাত্র। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।
মূলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বকুল বলেন, ছেলেটি প্রত্যেক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করে গেছে। এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরিবার দরিদ্র হওয়ায় তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্বব হচ্ছে না। ছেলেটির জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে। পড়াশোনা করতে যা যা করা দরকার আমার পরিষদের পক্ষ থেকে সেটা করা হবে।
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈকত ইসলাম বলেন, তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ছেলেটির শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হবে।

author avatar
SK Mohoshin

বিজ্ঞাপন

BONOLOTA IT POS ads