সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পরা পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে দক্ষ তারুণ্য ত্যাগী নেতৃত্ব শীর্ষ পদে দেখতে চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ৭ বছর পর ১৯ ফোব্রুয়ারি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনকে ঘিরে প্রবীণ ও নবীন পদপ্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানারে, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। এবারের সম্মেলনে দলের সভাপতি ও সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাই শীর্ষ দুই পদে বর্তমান দায়িত্বশীলদের বাইরে চমক আসছে জোরালো জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
পাবনা ঐতিহাসিক পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে (পুলিশ লাইনস মাঠে) সম্মেলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেশকয়েক বছর পরে এই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের কারণে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জেলার প্রথম সারির নেতারা প্রচার প্রচারণায় পুরো শহর জুড়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ঝুলিয়েছেন। কে হবে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই নিয়ে চলছে জোর জল্পনা-কল্পনা।
বালিশ কান্ড, মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল, হেমায়েতপুর ইউনিয়নে ভয় ভীতি দেখিয়ে শত শত বিঘা জমি ক্রয় থেকে শুরু করে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াত-বিএনপি পন্থীদের নিয়োগ থেকে মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা বা বালু মহল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে চায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদ নিয়ে বিভ্রত একাধিক জেলা সহ-সভাপতিসহ বেশীর ভাগ সদস্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ার জন্য এগুলোকে কারণ মনে করছেন তারা। যার প্রতিফলন দেখা যায় পাবনার স্থানীয় সরকারের প্রায় সব নির্বাচনে।
স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে জেলা, পৌরসভা, উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। মিছিল-মিটিং, পাল্টাপাল্টি শোডাউন, বহিষ্কারের ঘটনায় সাংগঠনিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে জেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগ। ওই পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। দলকে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারের স্বার্থে সদরের ইউপি নির্বাচন হওয়া নয়টি ইউনিয়ন পরিষদের নয়টিতেই হেরেছে নৌকা।
তাই আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে কারা আসছেন নতুন দায়িত্বে। ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর অর্থাৎ ৬ বছর আগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন পরবর্তী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা আসলেও ১৫ মাস পরে ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
দীর্ঘ ৬ বছর পর জেলা কাউন্সিল ঘিরে শহরজুড়ে সাজসাজ রব পড়েছে। জেলা কমিটির শীর্ষ দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ও তাদের অনুসারিরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ মাঠে-ময়দানে নানাভাবে সরব হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে চলছে প্রচার-প্রচারণা। কে হচ্ছেন সভাপতি আর কে হচ্ছে সম্পাদক এ নিয়ে যেন জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি ও সম্পাদক পদে কমপক্ষে ৮ জনের করে নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (সিনিয়র সহসভাপতি) ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি তৌফিকুর রহমান তৌফিক, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য, পাবনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাদিরা আক্তার জলি।
সাধারণ সম্পাদক পদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলায়েত আলী বিল্লু, পাবনা পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান মিন্ট, সাবেক ছাত্রনেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাজাহারুল ইসলাম মানিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার কয়েকজন নেতা বলেন, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড কবেই ভেঙ্গে পড়েছে। যেটা সদর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র থেকে শুরু করে গোটা দেশবাসী দেখেছে।এই কোন্দল, বিশৃংখলা বা গ্রুপিংয়ের পিছনে জেলার এক শীর্ষ নেতা দায়ী। ক্ষমতাকে আগলে না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি। হাউব্রিড-অনুপ্রবেশকারীদের কারণে আজ দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২ এপ্রিল পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর দলটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন পুলিশ লাইন্স মাঠে বেলা ১১ টায় উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোঃ আব্দুর রহমান। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপির পরিচালনায় বিশেষ অতিথি থাকবেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্সম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কার্যকরী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, কার্যকরী সদস্য বেগম আখতার জাহান, প্রফেসর মেরিনা জাহান এমপি ও প্রধান বক্তা সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য দেবেন, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরও পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি।
বিজ্ঞাপন