টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন এক কলেজছাত্রী। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি মনজুর হোসেনেকে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন ওই ছাত্রী। অভিযুক্ত মনজুর হোসেন বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র ও কলেজ ছাত্রীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর হোসেন দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে মনজুর হোসেন ওই কলেজ ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলস্থ সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেন।
এরই মধ্যে একাধিকস্থান থেকে ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনও মনজুর হোসেনের পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ওই কলেজছাত্রী ও ইউএনও মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর কলেজছাত্রী বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএনও মনজুর হোসেনকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
এ সময় ইউএনও মো. মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে জানায়- তারা দুজন পাশের ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে বিয়ে করবেন।
২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি গাড়িতে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারত যান। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছে। ভারতের হায়দারাবাদে হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে তারা দুজনেই চিকিৎসা নেন। ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনও’র পার্সোনাল ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন ইউএনও মো. মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে। ইউএনও’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি তিনি গোপন করেছেন বলে জানান। ১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা যার যার বাড়িতে চলে যান। পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করেন এবং ইউএনও মো. মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মো. মনজুর হোসেন তাকে বিয়ে না করায় পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক বুলবুল হোসেন বলেন, আমি তৎকালীন স্যারের হুকুম পালন করেছি। কাজের অংশ হিসেবে ওই কলেজছাত্রীসহ তিনজনকে বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে গেছি। এর আগেও ওই নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে একাধিকবার এসেছেন।
প্রতারণার শিকার কলেজ ছাত্রী জানান, ইউএনও মনজুর হোসেন তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া করে বসবাস করেছেন। মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করেছেন। তিনি শুধু তাকে ব্যবহারই করেছেন- সামাজিক স্বীকৃতি বা স্ত্রীর মর্যাদা দেননি।
কলেজ ছাত্রীর মা জানান, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন তার মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছেন। একাধিক পাত্র পক্ষ বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেও ইউএনও’র পরামর্শে তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন বিয়ের স্বীকৃতি না দেওয়ায় তারা সামাজিকভাবে হেয় হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মনজুর হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নাই। বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর তাকে একদিন ফোন করে জানান, একটি মেয়ে তার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি তিনি দেখার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। তিনি ওই মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনক (রাজস্ব) ও তদন্ত কমিটির সদস্য সোহানা নাসরিন জানান, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত চলছে। আগামি বৃহস্পতিবারের (১৪ এপ্রিল) মধ্যে তদন্ত কমিটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।
বিজ্ঞাপন