‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক রয়েছে’ » Itihas24.com
ঈশ্বরদী৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ঈশ্বরদীর সবশেষ নিউজ । ইতিহাস টুয়েন্টিফোর

‘শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক রয়েছে’

বিশেষ প্রতিবেদক
এপ্রিল ৬, ২০২২ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় উপনেতা (জিএম কাদের) আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার বিষয়টি নিয়ে, এটা বাস্তব। তবে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে যত ঋণ নিয়েছি তা সময়মতো পরিশোধ করেছি। বাংলাদেশ একটি দেশ, যে দেশ কোনো দিন ঋণ পরিশোধে ডিফল্টার হয়নি, হবেও না। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক মজবুত। সেটা আমি বলে রাখতে চাই। আমরা অত্যন্ত সতর্ক।

বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এর আগে জিএম কাদের তার বক্তব্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদ আছে বলেই রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আছে। ভারসাম্য আছে। এটা হলো বাস্তবতা। অন্যপথে যারা ক্ষমতা দখল করতে চায় তাদের কাছে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ৭০ অনুচ্ছেদ দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখা হয়েছে এটাই বাস্তবতা। এখন এটা দেওয়া হয়েছে যে, অবৈধভাবে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের সর্বোচ্চ সাজা পর্যন্ত হবে।

দ্রব্যমূল্যসহ জাতীয় জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলীয় উপনেতা যেসব কথা বলেছেন, আমাদের সংবিধান পাঠদান করিয়েছেন। তার প্রতিটির উত্তরই আছে। তার সবগুলির জবাব দেবো।

সংবিধান নিয়ে জিএম কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো এমন একটি দলের থেকে সংবিধানের বিষয় শুনতে হচ্ছে, যে দলটি ক্ষমতায় এসেছিল সংবিধান লঙ্ঘন করে, ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল জারি করে। মার্শাল ল’র মাধ্যমে যাদের জন্ম, যার নেতা ক্ষমতাই দখল করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে বিদায় দিয়ে- সেনাপ্রধান হয়ে গেলেন রাষ্ট্রপ্রধান। যে সংবিধান স্থগিত করে ক্ষমতায় এসেছিল তার থেকে আজকে আমাদের সংবিধান শিখতে হচ্ছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা শুনতে হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একে তো করোনা, তারপর ইউক্রেনে যুদ্ধ। সমস্ত ইউরোপে সাড়ে সাতভাগের ওপরে মূল্যস্ফীতি। কোনো কোনো দেশে ৮০ ভাগ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি হয়ে গেছে। এটা হয়েছে একটা করোনার ধাক্কায়, আরেকটা যুদ্ধের ধাক্কায়। সেখানে বাংলাদেশে ছয় ভাগের নিচে আছে মূল্যস্ফীতি। বিরোধী দলের নেতা বলেছেন মাথাপিছু আয়ও যেমন বেড়েছে, একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যও বেড়েছে। এটা হলো বাস্তব।

তিনি বলেন, এই করোনার ধাক্কার মধ্যেও আমরা প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ৯৪ ভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ৫১১ মার্কিন ডলার হয়েছে। জিনিসের দাম বাড়লেও মানুষের আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যসীমাও হ্রাস পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি-জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদেশ থেকে কোনো জিনিস কেনার সময় ১০ টাকার জিনিস ২০ টাকায় কিনে বাকি ১০ টাকা পকেটে ঢুকাতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সেটা হয় না। আমরা বরং দাম কমিয়ে আনি।

সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়ার বিষয়ে জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা পায়রা পাওয়ার প্লান্ট আটমাস আগে উদ্বোধন করেছি। এতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। আমরা প্রত্যেকটি কাজ আগে করি, কিছু টাকা বাঁচাই। কিছু কিছু জায়গায় কাজ হয়।

উন্নয়নে জনভোগান্তির অভিযোগের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়ন কার জন্য? উন্নয়ন তো এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য। মানুষ যেন চলাচল করতে পারে তার জন্য উন্নয়ন। এখন হয়তো আপাতত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এটা সম্পন্ন হওয়ার পর উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে ৬০ হাজার লোক যাতায়াত করতে পারবে। আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।

প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। রড-সিমেন্ট প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এটা কেবল আমাদের দেশে নয়, সব দেশে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য আমেরিকার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের তেল চার ডলার হয়ে গেছে। কোনো কিছুর দাম বাড়লে তারসঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হয়। না হলে আমাদের কাজ সম্পন্ন হবে না।

নিত্যপণ্যের মূল্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোটা চালের দাম এখন ৪৬ টাকার মতো আছে। সেটা খুব বেশি বাড়েনি। চিকন ‍ও মাঝারি চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। আলু পাইকারি বাজারে ২০ টাকা, খুচরা বাজারে ২৫ টাকা। পেঁয়াজের দামের জন্য এখন কৃষক হাহাকার করছে। বেগুনের দাম ১১০ টাকার ওপরে চলে গেল। সেটা এখন কমে ৮০ টাকায় এসেছে। তা বেগুন দিয়ে বেগুনি না খেয়ে আরো যেসব সবজি সহজলভ্য আছে সেটা দিয়ে খেলেই হয়। আমরা তো তাই খাই। বেগুনি না বানিয়ে মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে খুব ভালো বেগুনি বানানো যায়। আমরা এভাবে করি। সেভাবে করা যায়।

এ সময় জিনিসপত্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যাতে বেশি কষ্ট না পায় সেই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতিরিক্ত গাড়ি এখন রাস্তায় চলে। সবাই ট্রাফিক রুল মেনে চললে আর গাড়ি কম বের করলে যানজট তো থাকে না। গাড়িতেও চড়বেন, একেকটি পরিবার দুই/তিনটি গাড়ি বের করবেন। আবার ট্রাফিক জ্যাম হলে গালি দেবেন- এটা তো চলবে না।

নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।

বিজ্ঞাপন

BONOLOTA IT POS ads