মহারাজ তিনি। লেখক নন কেবল স্বপ্নবান। যাপন যেন উৎসবের হয় সেটাই ছিল তার আরাধ্য পথ। লিখেছেন তিনি, বুদ হয়েছেন পাঠক। এখনো তিনি আছেন গান-নাটক আর হিমু-রুপাদের সংলাপে-সংগীতে। বুধবার (১৯ জুলাই) এক বর্ষায় অনেককে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি। আজ নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও বাংলা সাহিত্যের রাজাধিরাজ হুমায়ূন আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তার প্রিয় ঋতু ছিল বরষা। তাই গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক, সিনেমা কিংবা গানে, বৃষ্টিবন্দনা করেছেন বহুবার, বহু ঢঙে। আর এই বৃষ্টিময় বরষা দিনেই তিনি পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে।
এক স্বপ্নচারী জাদুকরের গল্প। শুধু নিজে স্বপ্ন দেখেননি সেই সঙ্গে একটি জাতি কিংবা পুরো প্রজন্মের স্বপ্নের কাণ্ডারি হয়ে আছেন তিনি।
ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান। সব বয়সীদের মনের খোরাক লিপিবদ্ধ করেছেন সাদা কাগজে। কিন্তু অকালেই চলে গেছেন তার সাজানো সাম্রাজ্য থেকে। পার করেছেন অনন্ত নক্ষত্রলোকে যাত্রার ১১টি বছর । কিন্তু একজন হুমায়ূন বেঁচে থাকবেন বৃষ্টিস্নাত ভোরে, বেঁচে থাকবেন জোছনা রাতের চাঁদের আলোয়, বেঁচে থাকবেন লাখো পাঠকের মনের মণিকোঠায়।
বিনোদন জগতে হুমায়ূন আহমেদ কালজয়ী হয়ে আছেন তার অনবদ্য সব নির্মাণ ও রচনায়। এ অধ্যায়ের সূচনা হয় আশির দশকে। নির্মাতা নওয়াজীশ আলী খানের পরামর্শে টিভি নাটক লেখা শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। প্রথম কাজটি ছিল ‘প্রথম প্রহর’। এটি ১৯৮৩ সালে বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল।
এর দু’বছর পর ১৯৮৫ সালে ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিক দিয়ে সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ধারাবাহিকটি ওই সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এরপর ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’সহ বহু নন্দিত নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি। এসব নাটকের গল্প, সংলাপ, নির্মাণশৈলী কিংবা শিল্পীদের অভিনয় এখনও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। এমনকি নতুন প্রজন্মের দর্শকের কাছেও এসব কাজ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
নব্বই দশকে চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেন হুমায়ূন আহমেদ। তার নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এরপর তিনি একে একে নির্মাণ করেছেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘আমার আছে জল’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমাগুলো। এসব সিনেমায় ব্যবহৃত সিংহভাগ গান রচনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ নিজেই।
হুমায়ূন আহমেদ প্রায় নব্বইটি একক নাটক পরিচালনা করেছিলেন। এগুলোর বেশিরভাগই দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবং এই সময়ে এসেও সেই পুরনো নাটকগুলো দেখে এবং মুগ্ধতা প্রকাশ করে দর্শক। তার নির্মিত কয়েকটি একক নাটক হলো- ‘আমরা তিনজন’, ‘এই বরষায়’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘কনে দেখা’, ‘খোয়াব নগর’, ‘গৃহসুখ প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘চৈত্র দিনের গান’, ‘ছেলে দেখা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘নুরুদ্দিন স্বর্ণপদক’, ‘পুষ্পকথা’, ‘বাদল দিনের প্রথম কদমফুল’, ‘বুয়া বিলাস’, ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘সবাই গেছে বনে’ ইত্যাদি।
কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, পরিচালক বিভিন্ন বিভাগে তিনি মোট আটটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছেন।