প্রায় দুই দশক ধরে একই নেতৃত্বে চলছে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি। এই দুই ইউনিটে নেতৃত্বে থাকা নেতারাও হয়েছেন প্রবীণ। প্রবীণ নেতাদের নেতৃত্বে থাকায় অনেক টায় ঝিমিয়ে পড়েছে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাই দলকে চাঙ্গা করতে সিদ্ধহস্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। দ্রুত রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন এবং বর্ধিত সভার মাধ্যমে সম্মেলনকে সফল করার তাগাদাও দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। এসব খবরে যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা উচ্ছ্বাস। সম্মেলন ঘিরে বেশ উজ্জীবিত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, আগামী ২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আর ৩ সেপ্টেম্বরে হবে জেলা যুবলীগের সম্মেলন। নেতৃত্ব নির্বাচনে এবার দলটি অপেক্ষাকৃত কম বয়সের স্মার্ট ও সাবেক নেতাদের প্রাধাণ্য দিবেন। যারা দলের জন্য দুঃসময়ে ত্যাগ ও সাহসের সঙ্গে পাশে থেকেছেন এবং দলকে সংগঠিত করার জন্য ভালো নেতৃত্ব দিয়েছেন -এমন নেতাই খুঁজছে দলের নীতিনির্ধারকেরা। যুবলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ২২ আগস্ট সকাল ১০ টায় দুই ইউনিটের বর্ধিত সভাও আয়োজন করা হয়েছে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হেলাল উদ্দিন। ২০ আগস্ট এ সম্পর্কিত যৌথভাবে একটি চিঠিও ইস্যূ করেছেন নগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু। তাতে নেতাকর্মীদের বর্ধিত সভায় এসে তা সফল করার আহব্বান জানান তারা।
জানা গেছে, সভাপতি পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে আলোচনার মধ্যে আছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, যুবলীগের সহ-সভাপতি মুখলেছুর রহমান মিলনসহ অনেকেই। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, আইন বিষয়ক সম্পাদক মাজেদুল আলম শিবলীসহ আরও অনেকেই।
মাঠ পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, তারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমিদখল, মাদকসেবী বা কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে নেতৃত্বে দেখতে চান না। এক্ষেত্রে তারা মহানগর যুবলীগে প্রায় দেড় যুগ ধরে টানা নেতৃত্বে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমাপ্তি ঘটিয়ে নতুন নেতৃত্ব চাইছেন। তাদের প্রত্যাশা কর্মীবান্ধব যুবলীগের স্মার্ট যুবনেতা। তারা মনে করেন রাজশাহীতে দলের অবস্থা ধরে রাখতে যারা সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করছেন তারাই যুবলীগের নতুন কমিটির নেতৃত্বে আসবেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মহারগর যুবলীগের সভাপতি পদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি। ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে দলের ভেতরে ও বাইরে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। আমি দীর্ঘ সময় মাঠে থেকে যুবলীগের নেতাকর্মীদের পাশে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। অনেক যুবনেতাদের চাকরি ও ব্যবসার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তারা চায় আমি যেনো নেতৃত্বে আমি। আমারও চাওয়া নেতৃত্বে এসে দলকে সুগঠিত করা এবং নেতাকর্মীদের পাশে থাকা।’
একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপে রয়েছেন প্রায় দেড় ডজন নেতা। যাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন নগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আকতার নাহান। তিনি বলেন, ‘সংগঠনে প্রায় অস্তিত্বহীন দুই নেতার অবসান দেখতে চাই আমরা। দ্রুত সম্মেলন হলে সংগঠনে আবার প্রাণ ফিরে আসবে।’
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয়বার রমজান আলী সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। এর আগে ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে তারাই সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হন। মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমরা দুই মেয়াদে ২০ বছর নেতৃত্বে আছি। এবার আমরা যুবলীগের নেতৃত্বে আসব না। নতুনরা এবার দায়িত্বে আসুক এটাই চাচ্ছি।
এদিকে সাত বছর পর রাজশাহী জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে চোখ সবার। প্রায় ২৮ জন নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পদপ্রত্যাশী এসব নেতা আওয়ামী লীগ নেতাদের সমর্থন আদায়েও তৎপরতা চালাচ্ছেন। গত ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি– এই তিন দিন জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলা যুবলীগের দুই পদের জন্য ২৮ জন নেতা তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন।
সভাপতি পদের জন্য যারা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন- বর্তমান সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন রুবন, পবা উপজেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি এমদাদুল হকসহ মোট ১০ জন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন- জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঘা উপজেলার পাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন মিলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মামুন আর রশিদ, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য হাসিনুর রহমান সজলসহ মোট ১৮ জন।
সর্বশেষ রাজশাহী জেলা যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বার আবু সালেহ সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক হন খালিদ ওয়াসি টিটু। তিনি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম সেন্টু। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। এর পর তিনি গত ২০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এবার তিনি জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি।
দুই দশক ধরে পুরোনো নেতৃত্ব থাকায় জেলা যুবলীগ প্রায় নিষ্ক্রিয়। সংগঠনের কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণে বর্ধিত সভার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি আবু সালেহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়ে গেলো দলটিতে থাকা। বয়স হয়েছে। এখন নতুন নেতৃত্ব আসুক এটাই চাচ্ছি।’ জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মাহমুদ হাসান ফয়সাল সজল বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন নেই। পুরোনো নেতৃত্ব এবং সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় সংগঠনে অচলাবস্থা চলছে। সংগঠনের সম্মেলনের কথা শুনে নেতাকর্মীরা বেশ আনন্দিত। সম্মেলন হলে দলে গতি ফিরবে বলে জানান তিনি।’
২০১৬ সালে যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদটিতে নেতৃত্ব আসে দলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের মাধ্যমে। কিন্তু এবার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদটিতে ইলেকশন নয়; হবে সিলেকশন। আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় আগেভাগেই যুবলীগের নেতাদের কাছে চাওয়া হয় জীবন বৃত্তান্ত। সেই জীবন বৃত্তান্তের আলোকে যাচাই-বাছাই করেই গঠিত হবে রাজশাহী মহানগর ও জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা বলেন, ‘সম্মেলন হচ্ছে সংগঠনের একটি গতানুগতিক ধারা। সেই ধারা অনুযায়ী কমিটি গঠিত হবে। আর এই কমিটিতে কারা আগামীতে নেতৃত্বে আসবেন তা নির্ধারণ করবেন দলটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। আমরা মূলত সমন্বয়ক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব। এ লক্ষ্যে আগামী ২২ আগস্ট বর্ধিত সভা আছে; সেখানে আমরা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এসব বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করব।