দীর্ঘ এক বছর নিজ বাড়িতে যাওয়া হয়নি মাদরাসা ছাত্র সিয়ামের (১০)। বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা হয়নি এক বছরেও। তাইতো মনটা বিষিয়ে উঠেছিল সিয়ামের। বাবা,মা ও ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য মনটা কাঁদছিল। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি না দেয়ায় সে নিরুপায় হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য মাদরাসা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার পথ তার চেনা ছিল না। তাইতো মাদরাসার নিকটবর্তী চুয়াডাঙ্গার আনসারবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে উঠে পড়ে ঈশ্বরদীগামী রকেট মেইল ট্রেনে। ট্রেনটি রাতে ঈশ্বরদী জংসন স্টেশনে এসে পৌঁছালে সিয়াম ট্রেন থেকে নেমে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় একজন ট্রেনযাত্রী ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ সিয়ামকে রেলস্টেশন থেকে নিজ হেফাজতে নেয়।
ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ ডিসেম্বর (শনিবার) দিবাগত রাতে। সিয়াম চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আমিনিয়া দারুল কওমী মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার খাসপাড়া এলাকার মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে।
ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক(এএসআই) সোহেল রানা রাত ৯ টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। তারপর সিয়ামের দেওয়া তথ্যমতে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাবাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে শনিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে সিয়ামকে বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়।
এ এসআই সোহেল রানা আরো জানান, সিয়াম নিজের বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য কাউকে কিছু না বলেই মাদ্রাসা থেকে চলে আসে। তারপর উপজেলার আনসারবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের একটি রকেট মেইল ট্রেনে উঠে পড়ে সে। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে থামলে নেমে যায় সিয়াম। গন্তব্য ভুলে হারিয়ে যাওয়া শিশুটির কান্না দেখে এরশাদ নামে ট্রেনের এক যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে তাৎক্ষণিক রেলস্টেশনে গিয়ে সিয়ামকে হেফাজতে নেয়।
সিয়াম জানান, মাদরাসা থেকে কোন ছুটি না পেয়ে সে বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য মাদরাসা থেকে পালায়। কোন গাড়ীতে করে নিজের বাড়িতে যেতে হয় সেটা তার জানা নেই। শনিবার বিকালে মাদরাসা থেকে বের হয়েছে চুয়াডাঙ্গা আনসার বাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে রকেট মেইল ট্রেনে ওঠে সে। ট্রেনটি ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পৌঁছে হঠাৎ দাঁড়িয়েছে যায়। সেখানে ট্রেন থেকে নেমে যায় সিয়াম। এরপর ট্রেনের এক যাত্রী তাকে দেখতে পেয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
সিয়ামের বাবা মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত আমার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছি। সেজন্য পুলিশদের ধন্যবাদ।
এরশাদ নামে ট্রেনের ওই যাত্রী বলেন, ট্রেনের মধ্যেই দেখছিলাম পাঞ্জাবি পরে ছেলেটি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও কিছু বলেনি। পরে স্টেশনে নেমে আমি ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ নম্বরে একজন লোক খবর দিলে সাথে সাথে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে তার বাবা এলে পুলিশ সিয়ামকে হস্তান্তর করে।
বিজ্ঞাপন