দেশে যাঁরা শিক্ষকতা পেশায় আসছেন তাঁদের অনেকেই আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেন না। পেশায় আসার পর যে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন সেটাও যথেষ্ট নয়। এ কারণে শিক্ষকদের মানের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি মর্যাদার বিষয়টিও জড়িত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা উপেক্ষিত। করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে দেশে যখন শিক্ষা কার্যক্রম আবার চালু করা হয়েছে, তখন এই বিষয়ও সামনে এসেছে।
শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মান ও মর্যাদা শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মর্যাদা বেশি থাকলে মানসম্পন্নরা সেই পেশায় আসেন। কিন্তু দেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। মাধ্যমিকের শিক্ষকরা তাঁদের বেতন-ভাতা নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে এখন দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেনই এক নম্বর যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায়ই আজ মঙ্গলবার সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২১’। ইউনেসকো এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করেছে ‘শিক্ষকরাই শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’। করোনাকালীন শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষকদেরই মূল দায়িত্ব নিতে বলেছে ইউনেসকো।
শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কভিড-১৯-এর কারণে সারা বিশ্বের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা বদলে গেছে। প্রথমত, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি আসছে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। এর সঙ্গে আবার মান-মর্যাদার বিষয়টি উঠে এসেছে। শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই, কিন্তু সদিচ্ছার প্রতিফলন বা বাস্তবায়ন আমরা দেখছি না। প্রাথমিক শিক্ষায় কোনো ক্যাডার নেই। ফলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মজীবন উপেক্ষিত। এতে মেধাবীরা আসছেন না। এসব সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।’
ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, চীনের ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে, শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এই গড় মাত্র ৩৫ শতাংশ। চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ওপরে। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়, সেখানে এসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীরাই সবচেয়ে ভালো করছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে, মর্যাদা আছে বলে ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং ধরে রাখাও সহজ হয় এসব দেশে।
বিজ্ঞাপন