বোরকাপড়া এক তরুণীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখা তরুণকে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। মার খেলেও তরুণীকে ছাড়ছিলেন না খালি গায়ে থাকা ওই তরুণ। এক পর্যায়ে তরুণীসহ পড়ে যান। এরপরও থামেনি প্রহার। জিরিয়ে জিরিয়ে পেটাচ্ছিলেন অপর কয়েকজন তরুণ।
এমন একটি ভিডিও শনিবার (১১ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের পাশে ৩১ মে ঘটনাটি ঘটে। উত্ত্যক্ত করার সময় বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে বখাটে কিশোর গ্যাংদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন আবদুল মোনাফ নামের ওই তরুণ।
এদিকে ভাইরাল ভিডিওর সূত্র ধরে রোববার ভোরে প্রহারকারী কিশোরের গ্যাংয়ের দুই সদস্য রায়হান ও আরমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াসের।
তিনি বলেন, ‘৩১ মে রাতে আবদুল মোনাফ কক্সবাজার সদর থানায় একটি অভিযোগ নিয়ে আসেন। সেখানে অভিযোগ ছিল কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। তদন্তে এক তরুণীকে নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা শুনতে পান তদন্ত কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী তরুণকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি চিনেন না বলে দাবি করেন। ফলে বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে শনিবার রাতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা গেছে এক তরুণীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা এক তরুণকে অপর কয়েকজন অমানবিকভাবে পেটাচ্ছেন। তরুণীকে জড়িয়ে ধরা খালি গায়ের তরুণটি থানায় অভিযোগকারী হিসেবে শনাক্ত হয়। ভিডিওর ঘটনাটি চরম অমানবিক। এটা সভ্য সমাজে বেমানান। ভিডিওটিকে গুরুত্ব দিয়ে রাতেই অভিযানে নামে পুলিশ। ভোরে প্রহারে জড়িতদের মধ্যে আরমান ও রায়হান নামে দুজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আনো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, এটা জানতে চেষ্টা চলছে আসলে সেদিন কেন এমন হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার তরুণ-তরুণী কারা? যদি তারা ভাই-বোন হয় তাহলে সেদিন এ ঘটনা চাপিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
কিন্তু মারধরের শিকার আবদুল মোনাফ রোববার থানায় এলাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট পেয়েছি আমরা। আমাদের বাবা মারা গেছেন। ফ্ল্যাটে থাকি আমরা এবং সেখান থেকে ৩১ মে আমার বোন মামার বাড়ি যাচ্ছিল। পথে খুরুশকুল মনুপাড়ার জামাল-রায়হানরা বোনকে নোংরা ভাষায় উত্ত্যক্ত করে। এ সময় বোন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফিরে আসতে চাইলে তরুণরা বার বার পথ আটকায়। প্রকল্প থেকে এসব দেখে দৌড়ে গিয়ে বোনকে উত্ত্যক্তের কারণ জানতে চাইলে কিশোরগ্যাংরা বোনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন বোনকে বাঁচাতে জড়িয়ে ধরি। এ অবস্থায় আমাকেও মারধর করে তারা।’
মোনাফ অভিযোগ করেন বলেন, ‘ঘটনার পরপর হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে থানায় অভিযোগ দেই। কিন্তু পুলিশ তদন্তে কালক্ষেপণ করায় শনিবারও হামলাকারীরা আমাকে হুমকি দেয়। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এখন সবাই দৌড়াচ্ছে।’
পুলিশের দাবি মতে ৩১ তারিখের অভিযোগে ছিনতাইয়ের কথা উল্লেখ করে বোনকে উত্ত্যক্ত ও প্রহারের কথা কেন গোপন করেছিলেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দেননি মোনাফ।
ওসি মুনীর উল গীয়াস বলেন, সবকিছু খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং সেভাবেই কাজ চলছে।
বিজ্ঞাপন